Saturday, June 21, 2025

ধর্ষণের শিকার শহিদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সেদিন যা ঘটেছিল

আরও পড়ুন

জুলাই আন্দোলনে নিহত শহিদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে (১৭) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ১৮ মার্চ তিনি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। নিহতের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মার্চ জুলাই আন্দোলনে নিহত শহিদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া বাবার কবর জিয়ারত করতে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানী এলাকায় যান। সেখানে বাবার কবর জিয়ারত শেষে সন্ধ্যায় নানাবাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় সাকিব ও সিফাত নামে দুই যুবক তাকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে ওই দুই যুবক মুখ চেপে ধরে পাশের জলিল মুন্সির ভিটা বাগানে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, এই পাশবিক ঘটনার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। যাতে তিনি কাউকে কিছু না জানান।

আরও পড়ুনঃ  বাবা-মাকে মারধর করে ঘরে আগুন দিলো যুবক

পরে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে দুমকি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে এবং আদালতের নির্দেশে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা পটুয়াখালী কারাগারে আটক রয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানায়, ধর্ষণের পর থেকে চরম মানসিক অস্থিরতা, অপমানবোধ এবং সামাজিক চাপের কারণে লামিয়া চরম হতাশায় ভুগছিলেন। তাদের ধারণা, মানসিক যন্ত্রণাই শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

আরও পড়ুনঃ  কারাগার থেকে যেভাবে পালিয়েছেন আবরারের খুনি জেমি

ভুক্তভোগীর মা জানান, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় তার কলেজশিক্ষার্থী মেয়ে। ধর্ষণের সময় আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলে। এরপর ভুক্তভোগী তার মা ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মার্চ থানায় গিয়ে অভিযোগ করে। সন্ধ্যায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ জানান, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  ‘এমন বউ যেন কারও কপালে না জোটে’ লিখে স্ত্রীকে হত্যা

এদিকে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাবাসী, সমাজকর্মী এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, একটি সম্ভাবনাময় প্রাণকে নির্মমভাবে নিঃশেষ করার দায় সমাজ ও রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন লামিয়ার বাবা শহিদ জসিম। তার কিছু দিন পর লামিয়ার এই মর্মান্তিক মৃত্যু যেন নতুন করে এক হৃদয়বিদারক অধ্যায় যোগ করল তার পরিবার ও দেশের ইতিহাসে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ