অভিজিৎ কুমার শীল। ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই)। দীর্ঘ এক বছর প্রশিক্ষণ করার পর চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন পূর্বে ‘নাস্তা না খেয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অভিজিৎ কুমারের বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ৪০তম ক্যাডেট এসআই-২০২৩ এর চূড়ান্ত পরীক্ষায়। সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর ২০২৩ সালের নভেম্বরের ৪ তারিখ রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ১ বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন তিনি। প্রশিক্ষণ চলাকালে ব্যাংকের ভাইভার জন্য ডাক পেলেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় ভাইভা দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে, প্রশিক্ষণের শেষ দিকে এসে অব্যাহতি পান অভিজিৎ। এ প্রসঙ্গে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘প্যারেড সেশনে নাস্তা না খেয়ে হইচই করার অভিযোগে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি মূল প্যারেডের সাথে সংযুক্ত ছিলাম না, ছিলাম প্যারেড কমান্ডারের আলাদা প্রাকটিসে। আমাদের নাস্তা খাওয়ার সুযোগ থাকতো সবার শেষে। সেদিন যথাসময়ে নাস্তা খেয়ে আরো আগেই প্রাকটিসে অংশ নিই। জীবনে রাজনীতির ‘র’ কোনো দিন করিনি, কোনো নেতার সুপারিশ নিয়ে যাইনি। কারো মাধ্যমে চাকরি পাইনি। কোনো আর্থিক লেনদেন করিনি। সবাইকে গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বলতাম চাকরি পেতে ১ টাকাও লাগে না। কিন্তু সেই অপবাদ আমাকে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এসআইয়ের ট্রেনিংয়ে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাতে হয়। নরমালি প্রতিমাসে ৭-৮ হাজার টাকা লাগে, আইনের বই কিনতে প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা। রুম বয়কে দিতে হতো ২০০০ টাকা। মা বাবার কাছ টাকা চাইতে কি পরিমাণ আত্মগ্লানিতে ভুগতাম তা আমি নিজেই জানি। জানি না মা বাবার এ ঋণ আমি কীভাবে শোধ করব। কবে তাদের মুখে হাসি ফোটাব।’
তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ চলাকালে গত বছরের ২৩ মে কম্বাইন্ড ৯ ব্যাংকের ক্যাশ অফিসারের ভাইভার জন্য ডাক পাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিসিএস ছাড়া অন্য কোন কিছুর জন্য আবেদন মঞ্জুর করে না। তবুও নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম আমি তো এসআই হবো, আমার পরিবর্তে অন্য কারোর জব হোক, অন্য বেকারের মুখে হাসি ফুটুক। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে চাকরিতে যোগদানের কিছুদিন আগে আমাকে বাদ দেওয়া হলো। ব্যাংকের ভাইভাটা দিতে পারলে ভালো কিছু হতেও পারতো। তাহলে জীবনটা আর এমন হতাশা আর অগোছালো হতো না।’
অভিজিৎ আরও বলেন, ‘এই চাকরিকে ঘিরেই আমি আমার পরিবারকে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম, কিন্তু সেই আমি এখন পরিবারের বোঝা হয়ে গিয়েছি। আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার সপ্তাহখানেকের মাথায় আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই অসুস্থতা আজ ৬ মাস হয়ে গেছে। কিন্তু অর্থাভাবে ভালো ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য নেই। বৃদ্ধ কৃষক বাবার এখন আর সামর্থ্য নেই মাঠে কাজ করার। এই অবস্থায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমাকে এভাবে অন্ধকার দিকে ঠেলে না দিয়ে যদি গুলি করে মেরে ফেলত, তাহলেও হয়ত এত কষ্ট হতো না। পরিবারের মানুষের অসহায় মুখগুলি দেখতে হতো না।’
যে কাজ আমি জীবনেও করিনি আমাকে দেওয়া হচ্ছে সেই অপবাদ