Tuesday, July 29, 2025

৫ দিনেও দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলা নেয়নি পুলিশ, যা বললেন সেই ওসি

আরও পড়ুন

বরগুনার তালতলীতে কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগের মামলা ৫ দিনেও নেয়নি থানা পুলিশ। এমন অভিযোগ তালতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহজালালের বিরুদ্ধে। যদিও ওসির দাবি, মামলার স্বপক্ষে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তাঁতিপাড়া এলাকার বশিরের স্ত্রী রিনা বেগম, তার দূর সম্পর্কে আত্মীয় ইব্রাহিম নামের এক যুবকের সঙ্গে পাশের বাড়ির এক কিশোরীকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে রিনা বেগমের বাড়িতে ওই কিশোরী ও তার মাকে ডেকে নেয়া হয়। এসময় কিশোরীর মায়ের অজান্তে কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভনসহ বিভিন্নভাবে ফুঁসলিয়ে ইব্রাহিমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে পাঠিয়ে দেয় রিনা বেগম। ইব্রাহিম ওই কিশোরীকে নিয়ে রাত ১০টার দিকে উপজেলার নকরী খেয়াঘাটে নিয়ে যায়। রাতে খেয়া না পেয়ে সেখানে একটি মাছের ঘেরে নিয়ে যায়। তারপর জোরপূর্বক কিশোরীকে রাতভর দলবদ্ধ ধর্ষণ করে ইব্রাহিমসহ তার চার অজ্ঞাত বন্ধু। পরেরদিন সকালে ২০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে কিশোরীকে চলে যেতে বলেন।

আরও পড়ুনঃ  বাড়ছে পানি, ডুবছে ঘরবাড়ি

তখন কিশোরী ইব্রাহিমকে বিয়ের কথা বললে তিনি বলেন, তোকে বিয়ের জন্য নিয়ে আসা হয়নি। তোকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এই বলে ইব্রাহিমসহ তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়।

এ দিকে মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ওই রাতেই ভুক্তভোগী পরিবার থানায় যায়। থানা থেকে বলা হয়েছে সকালে আসেন। ওই কিশোরীর খোঁজ মিললে তাকে নিয়ে পরেরদিন ২৪ এপ্রিল ফের থানায় যাওয়া হয়। পরে বিস্তারিত বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। তবে এ ঘটনায় থানার ওসি মো. শাহজালাল দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলা না নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে ধর্ষণের আলামত সংরক্ষণ রাখতে বলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনঃ  যার হাতে স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব আর জাতীয় মর্যাদার পতাকা সব সময় সুরক্ষিত ও সমুন্নত থাকবে : পিনাকী

ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, ‘ইব্রাহিমের সঙ্গে আগে দেখা বা পরিচয় ছিলো না। বাড়ির পাশের রিনা ভাবি আমাকে বিয়ের প্রস্তাবসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রাতে ওই ছেলের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়। আমাকে নিয়ে ইব্রাহিমসহ তার চার বন্ধু রাতভর ধর্ষণ করে। সকালে আমি ইব্রাহিমকে বিয়ের কথা বললে সে বলে তোকে তোর ভাবির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করে এনেছি। তোকে বিয়ে করবো কেন? এই বলে আমাকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ফেলে রেখে চলে যায় তারা।’ যদিও এরপর থেকে রিনা বেগম পলাতক রয়েছে।

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি মেয়েকে পেয়ে ইউপি সদস্য শাকিল খানসহ কয়েকবার থানায় যাই। মেয়ে বিস্তারিত ঘটনা পুলিশকে জানায়। তবে ওসি সাহেব কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আমরা জিডি করতে চাইলেও নানা অজুহাত দেখায় ও ইব্রাহিমকে থানায় ডাকার কথা বলেন। আমার মেয়ের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার বিচার চাই।’

আরও পড়ুনঃ  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে আসামি ছিনতাই

ইউপি সদস্য শাকিল খান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়টি শুনে ওই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে আমিও থানায় যাই। তবে ওই ছেলের সঠিক পরিচয় না পেয়ে মামলা নেয়নি পুলিশ ও আলামত রেখে দিতে বলেছেন।’

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালালের কাছে মামলা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি বা কোনো বক্তব্য পাইনি। নিখোঁজের বিষয়ে একটা তথ্য পেয়েছিলাম। পরে তাদের জিডি করার জন্য ছবিসহ আসতে বলেছিলাম। পরেরদিন আবার আসছে মেয়ে পেয়েছি, এই বলে চলে গেছে।’

বরগুনা পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ