Tuesday, December 24, 2024

কবর দেওয়ার সময় কেঁদে উঠল ‘মৃত’ নবজাতক

আরও পড়ুন

রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী ৯টার দিকে একটি কার্টনে করে বাড়িতে নেওয়া হয় নবজাতকের ‘মরদেহ’। নেওয়া হচ্ছিল কবর দেওয়ার প্রস্তুতি। এমন সময় কার্টন খুলতেই কান্না শুরু করে নবজাতক।

শনিবার (১ জুন) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সাত মাস আগে বিয়ে হয় মো. ইউনুস আলীর ও জেসমিন আক্তারের। বিয়ের একমাস পর জেসমিন গর্ভবতী হয়। কয়েকবার যান চিকিৎসকের কাছে। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক।

হঠাৎ রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে চিকিৎসকের কাছে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে রিপোর্টও ভালো আসে। কিন্তু বিকেলে পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে রিপোর্ট ভালো নয়, নবজাতক মারা গেছে বলে জানান মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন আয়েশা।

এরপর ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টনে করে বাড়ি নিয়ে জানাজা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টন খুললে নবজাতক কেঁদে ওঠে। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। সেই নবজাতক এখনো বেঁচে আছে।

আরও পড়ুনঃ  ঝাড়ফুঁক দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বৃদ্ধাকে হত্যা!

ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে আমার স্ত্রীর পেটে ব্যথা উঠলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ডা. শারমীন আয়েশা চেকআপ করে বলেন, বাচ্চা সুস্থ আছে। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র ব্যথা শুরু হয়। বিকেলে আবার চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্টনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টনে করে বাচ্চাকে দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই।

এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে যায়। বাচ্চার বয়স ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী হওয়ায় পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করে। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা আমার বাচ্চাকে জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চমেক হাসপাতালের ৬ তলায় ৩২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুনঃ  রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল

তিনি আরও বলেন, তারা আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯ দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনো অপরিপক্ব। তারা জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টনে করে নিয়ে যেতে বলে। বেঁচে থাকলেও বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এর জন্য ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী।

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরহাদ আনোয়ার জানান, শনিবার রাতে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভিড় দেখে ভেতরে যাই। পরে সব ঘটনা শুনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে মৃত বলল আমি বুঝতেছি না।

এ বিষয়ে জানতে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন আয়েশার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  মেট্রোরেলে এক যাত্রীকে কামড় দিলেন আরেকজন, ভিডিও ভাইরাল

যোগাযোগ করা হলে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াচড়া ছিল। ১৫ মিনিট নবজাতককে চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। রোগীর স্বজনরা নবজাতককে দেখতে আসে এবং হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায়।

সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, নবজাতক মারা গেছে তাদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও আমরা জানি না। যদি মারা যেত আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেব, রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করব।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমি ঘটনাটি জানি না। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ট হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ