ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গত শনিবার গভীর রাতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। তাদের হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি। ইসরায়েলের এমনই একটি ঘাঁটি হলো নেভাটিম বিমানঘাঁটি। অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ রাখা এই ঘাঁটিটি ইরানের সীমান্ত থেকে প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর সেই ঘাঁটিতেই ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইরানের ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে ঘাঁটিটির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়ে। যদিও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, ইরানি হামলায় ঘাঁটিটির তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি।
লেবাননভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে ইরানের বার্তা সংস্থা মেহের জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলে অবস্থিত নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে ইরানের ১৫টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে বিমানঘাঁটিটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
নেভাটিম বিমানঘাঁটি নেগেভ মরুভূমি অঞ্চলের কাছে বেয়ের শেভা শহরে অবস্থিত। এই ঘাঁটিতে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান এফ-৩৫-এর প্রধান ঘাঁটি। শনিবারের মধ্যরাতের হামলার আগে গত বছর এই বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালিয়েছিল আইআরজিসির বিমান বাহিনী।
তবে ইরানি গণমাধ্যমে এমন খবর দেওয়া হলেও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে এই বিমানঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে ভিন্ন খবরই দেওয়া হচ্ছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বরাতে গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইরানের হামলায় এই বিমানঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে সেটা খুব ভয়াবহ নয়। বিমানঘাঁটি অচলও হয়নি। রোববার সকালেই সেখান থেকে প্রতিদিনের মতো বিমান ওঠানামা করেছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইরানের কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নেভাটিম ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, ইরানি হামলায় বিমানঘাঁটির অবকাঠামোর সামান্য ক্ষতি হয়েছে। তবে রোববার সকালে এটি যথারীতি চালু ছিল।
গত শনিবার রাতে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। মূলত চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করে তেহরান। ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান।
যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকেও দাবি করা হয়, ইসরায়েলে হামলায় ব্যবহারের জন্য শতাধিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করেছে ইরান। যে কোনো সময় এ অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানায় ইসরায়েল।