Monday, December 23, 2024

‘বাবা আমরা পুড়ে মরবো, নাকি ছাদ থেকে লাফ দেবো’

আরও পড়ুন

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ১২ বছর বয়সী বড় মেয়ের জন্মদিনের আবদার রাখতে রেস্তোরাঁয় যান পরিবেশবিদ আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার। প্রাণঘাতী আগুন থেকে উদ্ধারের পর ফেসবুকে মেয়ের করা উক্তি দিয়ে পোস্ট করেন তিনি। মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সেই পোস্ট।

আগুনের শুরু ও পরে বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা একাত্তরের সাথে বিনিময় করেন অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান।

পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই পোড়া গন্ধ পান তিনি, মুহূর্তেই পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া, আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন সব ফ্লোরের মানুষ।

তিনি বলেন, আগুন লাগার বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে রেস্টুরেন্টে যারা ছিলো সবাইকে আমি সাবধান করলাম। চলেন ছাদে যাই। বের হয়ে যাই। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার পর দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে অনেক ধোঁয়া উঠছে। অনেক মানুষ নিচে থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে। আবার ছয়-সাত তলা থেকে অনেক মানুষ নিচে নামার চেষ্টা করছে। একটা হই হুল্লোড় শুরু হয়েছিলো। তখন আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছাদে চলে যাই। ছাদে যাওয়ার পথে ধোঁয়ার কারণে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

পর্যাপ্ত সিঁড়ি আর আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের মাঝে বেশি মাত্রায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো বলেও জানান তিনি।

এই পরিবেশবিদ বলেন, আমরা ছাদে যাওয়ার পর দেখলাম আগে থেকে কিছু মানুষ সেখানে ছিলেন। আমরা যাওয়ার পর সংখ্যাটা ৪০ এর মতো হয়। ছাদে ওঠার পর আমরা ভবনের চারদিকে ধোঁয়াও দেখেছি। এক পর্যায়ে লেলিহান শিখাও দেখতে পেয়েছি। আগুন দেখে অনেকে ভয় পেয়ে বমি করা শুরু করে। কেউ নামাজ পড়া শুরু করে। কয়েকেজন ছাদ থেকে লাফ দিকে উদ্যত হন। আমরা তাদের নিবৃত্ করি।

আরও পড়ুনঃ  তাপমাত্রা ছাড়াল ৪০ ডিগ্রি

তিনি বলেন, আগুন যখন বাড়ছিলো, তখন আমার দুই বাচ্চা বুকে এসে বলেছিলো, বাবা আমরা পুড়ে মারা যাব নাকি লাফিয়ে পড়ে মারা যাব? ওই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারিনি।

বেইলি রোডের আগুন থেকে বেঁচে ফেরারা বলছেন, আটকে থাকা দেড় ঘণ্টা ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। আগুন লাগার পর ছাদে ওঠার সিঁড়িতে আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটিতে ধোঁয়ায় অনেকেরই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আর, ওই ভবনে পর্যাপ্ত সিঁড়ি না থাকায় ছাদে উঠতে বেগ পেতে হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের মালিকানাধীন গ্রিন কোজি কটেজ আগুন লাগে। ওই ভবনটির বিভিন্ন তলায় ছিলো নানান রেস্তোরাঁ।

আরও পড়ুনঃ  ব্যাংকে যত টাকা থাকলে জাকাত দিতে হবে

কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকলের কর্মীরা। ততক্ষণে ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ও আগুনে নিহত হন বহু মানুষ।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন পাঁচজন।

পুড়ে যাওয়া ভবনে আগুনের সূত্রপাত একটি চা-কফির দোকান থেকেই হয়েছিলো বলে পুলিশের মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় ভবন মালিক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপসহ দুইটি রোস্তোরাার মালিকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

এদিকে আগুনে প্রাণহানির ঘটনার পরই রেস্তোরাঁর নিরাপদ পরিবেশ ও অনুমোদন দিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সারাদেশে সাড়ে চার লাখের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে।

বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয় নেই পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা, যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ