‘অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখছিলাম, কিন্তু কীসের জন্য যেন সবকিছু খাপছাড়া লাগে। আমি সবার জন্য একটা বোঝা। হাত দিয়ে যা ছুঁই তাই দুঃখ হয়ে যায়-এই লাইনটা বোধহয় আমার জন্যই। সবশেষে এইটাই উপলব্ধি করতে পারলাম যে, সবার বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী।” সুইসাইড নোটে কথাগুলো লিখে গেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান ফেরদৌস।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) রাতে নিজ বাসায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তার রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটে চরম হতাশা ও নিরাশার ছাপ ফুটে উঠেছে। নোটে আদনান লিখেছেন, সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোন কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি।
অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে কখনোই গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারি নাই। আজকেও হয়তো গুছিয়ে কিছু লিখতে পারবো না। শুধু দিনশেষে এইটুকুই উপলব্ধি করতে পারলাম মানুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অতল এক গহ্বরে।
তিনি আরও লেখেন, আমি নিজে মানুষ হিসেবে কেমন তা জানি না। হয়তো অনেক খারাপ নয়তো ভালো। জানি না মৃত্যু আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে কিনা, তবুও আমি আশাবাদী। এই ছোট্ট জীবনে যদি আমার আচরণে বা ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। সবাই ভালো থাকবেন। বাস্তবতার বেড়াজালে আর আটকে থাকতে চাই না। আমার লাশ পোস্টমর্টেম না করার জন্য অনুরোধ রইলো।
ক্যাম্পাস সূত্রে খবর, আদনানের বাড়ি মানিকগঞ্জে। প্রথমে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ইবির ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হলেও পরে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ট্যুরিজম বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন তিনি। তবে প্রথম বর্ষে ইয়ার ড্রপ করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে ক্লাস শুরু করেন। সর্বশেষ তিনি ওই বর্ষে পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। বাইরের দেশে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তার। এজন্য গত ৪/৫ মাস আগে থেকে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করেছেন।
আদনানের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, আদনান হতাশায় ও দীর্ঘদিন যাবত মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিল। তার চিকিৎসাও চলছিলো। হঠাৎ সে দুনিয়া থেকে চলে গেল। তিনি সন্তানদের জন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করেছেন।
ট্যুরিজম বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, আদনান মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার অনুরোধে তাকে কাউন্সিলিং করা হতো। হঠাৎ তার মৃত্যুতে বিভাগের সবাই শোকাহত।