জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ। সব মিলিয়ে প্রতি বছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। মূলত উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদেরই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন প্রতিষ্ঠানটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. উজ্জ্বল আলী। প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা মূল উদ্দেশ্য তার। এ অপকর্মে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শেখ ফরিদ সহায়তা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কলেজটির একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে গভীর সখ্য রয়েছে। প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলে শেখ ফরিদ তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে প্রভাষক উজ্জ্বলের কাছে পাঠান। সেই নম্বর ব্যবহার করে মেয়েদের ফেসবুক আইডি বের করেন উজ্জ্বল। এর মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে একপর্যায়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। পরে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের বাধ্য করেন শারীরিক সম্পর্কে। একাধিক ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে উজ্জ্বলকে ওই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি যোগদান করেন মতিঝিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে।
মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘আর্থিক অনিয়ম, নারী কেলেঙ্কারি ও বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডসহ হেন কোনো কুকর্ম নেই, যা প্রভাষক উজ্জ্বল করেননি। তিনি তিন বছর আগে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বহিষ্কার হলেও সেই পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষ ফের তাকে এখানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।’
মোহাম্মদ মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন বর্ষা আক্তার (ছদ্মনাম)। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে গাজীপুরে থাকেন। তিনি জানান, ‘স্যার আমাকে প্রচণ্ড হ্যারেজ করেছেন। নানা প্রলোভন দিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করেছেন। গভীর রাতে হুটহাট আমাকে ভিডিও কল দিতেন। না ধরলে গালাগাল করতেন। বিষয়টি এক ম্যাডামকে বলায় ওই লম্পট আমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।’
আরেক শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘উজ্জ্বল অত্যন্ত জঘন্য লোক। আমার মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। নিজের মেয়ের কথা এখন বললেও নিজের গায়েই লাগবে। কাউকে কিছু বলতেও পারছি না।’
মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের এক ছাত্রী জানান, ‘প্রভাষক উজ্জ্বল আমাকে অনেকদিন ধরেই বিরক্ত করতেন। আমার বান্ধবীর সঙ্গেও একই কাজ করেছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি যেতে না চাইলে হাত ধরে জোর করে নিয়ে যেতে চান। তখন আমি চিৎকার করলে স্থানীয় মানুষজন এসে তাকে আটক করেন।’
পরবর্তী ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি চেয়ারে বসা প্রভাষক উজ্জ্বলকে একটি মেয়ে চড়-থাপ্পড় মারছেন। একপর্যায়ে পায়ের জুতা খুলে তাকে পেটাতে থাকেন। এ সময় ওই ছাত্রী উচ্চকণ্ঠে বলছিলেন, এই শিক্ষক তার বান্ধবীসহ অনেকের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন।
উজ্জ্বলের অপকর্ম সম্পর্কে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রফেসর ফরিদ অধ্যক্ষ স্যারের বন্ধু। আর উজ্জ্বলকে সব সাপোর্ট দেন ফরিদ। অনেক মেয়ে অধ্যক্ষ স্যারের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেছে। তবে স্যার এসব অভিযোগ তেমন গুরুত্ব দেন না।’
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমিনুল হক বলেন, ‘আমাদের কলেজে এমন কিছু ঘটেনি। এমন কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঞা বলেন, ‘উজ্জ্বল এবং ওই ছাত্রী—দুজনই থানায় এসেছেন। দুপক্ষের কাছ থেকেই অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’