ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পাঁচ মাস ধরে বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। বর্তমানে এ মৃত্যু উপত্যকায় শিশুদের পাশাপাশি সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নারীরা। বিশেষ করে গাজায় এখন প্রায় ৬০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার মধ্যে পড়েছেন তারা। বিশ্বজুড়ে যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছিল, তখন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেখানকার অন্তঃসত্ত্বাদের এ তথ্য তুলে ধরে। খবর আলজাজিরার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ৮ মার্চ বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে এবং গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এই সময়ে গাজা উপত্যকার নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো সামনে আনেন। আল-কুদরা বলেন, প্রায় ৫ হাজার নারী এখনো এই অঞ্চলে প্রতি মাসে সন্তান প্রসব করছেন। তিনি বলেন, যে পরিস্থিতিতে তারা সন্তান প্রসব করছেন, তা অত্যন্ত ‘কঠোর, অনিরাপদ এবং অস্বাস্থ্যকর’। তিনি আরও বলেন, গাজায় বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন, যারা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াই তাদের গর্ভকালীন সময় পার করছেন এবং অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার মতো রোগে ভুগছেন। মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনি নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতি বছর ৮ মার্চ পালন করা হয়। সারা বিশ্বে নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অর্জনকে সম্মান জানাতে এই দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়। অনেক স্থানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি ছুটির দিন হিসেবেও পালন করা হয়।
মূলত লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা বা লিঙ্গবৈষম্য কমানো, প্রজননের অধিকার, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নির্যাতন, নারী-পুরুষের সমানাধিকারের জন্য বিশ্বজুড়েই পালন করা হয় এই দিনটি। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক নারী দিবস সারা বিশ্বে নারীদের একটি মহান উদযাপন। এই দিনটি বিশেষ করে নারীদের কৃতিত্বকে সম্মান এবং লিঙ্গবৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়। এ ছাড়া মেয়েদের শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং সমাজের সব অংশ থেকে লিঙ্গবৈষম্য দূর করাও গুরুত্বপূর্ণ।