রাজধানীর শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে নিহতদের মধ্যে ৯৩ জনের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তালিকাটি প্রাথমিক খসড়া এবং এ সংখ্যা যাচাই-বাছাইয়ের পর আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী এ তথ্য নিশ্চিত করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই তালিকা প্রাথমিক। তথ্য যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধান চলছে। চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শাপলা চত্বরে সংগঠনটির মহাসমাবেশে নিহতদের নিয়ে এর আগে অনুসন্ধান করে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’। ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক পেজে ৬১ জন নিহতের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। এছাড়াও আবার তৎকালীন বিবিসি ঢাকা প্রতিনিধি মার্ক ডামেট মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে জানিয়েছিলেন, ৫ ও ৬ মে’র সহিংসতায় অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে গত শনিবার (৩ মে) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার দাবি করেছেন, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের দুই দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্যসহ কমপক্ষে ৫৮ জন নিহত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘যতবার আমি হেফাজতে ইসলামকে কোনো বড় ধরনের বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখি, ততবার আমার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন্য শাপলা চত্বরের গণহত্যা নিয়ে করা তদন্তের কথা মনে পড়ে। যখন সারা বিশ্ব সেই গণহত্যার মৃতের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিল, তখন আমি ঢাকাতে বিবিসির প্রাক্তন সংবাদদাতা মার্ক ডামেটের সঙ্গে সেই কঠিন কাজটি হাতে নিয়েছিলাম। আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম যে দুই দিনের সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্যসহ কমপক্ষে ৫৮ জন নিহত হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই সপ্তাহব্যাপী তদন্তের সময়, রাস্তাঘাট চষে বেড়ানো, হাসপাতালের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করা, প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলা এবং দাফনের প্রমাণ সংগ্রহ করা, মানুষকে মুখ খুলতে রাজি করানোর চেষ্টা করার সময়, আমি প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভীত ছিলাম।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ মে কিছু ব্লগারের ইসলাম ধর্ম অবমাননার কারণে ১৩ দফা দাবি তুলে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হাজার হাজার কওমি আলেম শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মুসলমান অংশ নেন।
সেদিন বিকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় হেফজত কর্মীদের। পুলিশের গুলিতে আহত হন অনেকে। এরপর রাত গভীর হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে সরিয়ে দেয় তাদের। অভিযানে ব্যাপক গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়া হয়। হেফাজতে ইসলামের দাবি, ওইদিন অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৩ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে এবার।
প্রকাশ করা প্রাথমিক তালিকায় নিহতদের নাম, ঠিকানা ও পরিবারের সদস্যদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।