জাতীয় নাগরিক পার্টি’ নাম নিয়ে শুক্রবার আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল। পদ-পদবি নিয়ে শেষ পর্যায়েও দ্বন্দ্ব-বিভেদ মেটানোর চেষ্টা ছিল। শেষ পর্যন্ত উপদেষ্টার পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব পদে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক পদে সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হিসেবে হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে সবার মন যোগাতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিবের পদ তৈরি করা হয়। এই দুটি পদের জন্য দাবিদার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরে এই দুই পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলা বৈঠকে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা এই সিদ্ধান্ত নেন।
শুক্রবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতাদের দলের আত্মপ্রকাশের দিনে শীর্ষপদগুলোসহ ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হবে।
তবে পদ-পদবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই দল গঠনের প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে বেরিয়ে গেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কয়েকজন নেতা।
যদিও সমঝোতার মাধ্যমে তৈরি করা শীর্ষ পর্যায়ের দুটি পদে আলী আহসান জুনায়েদ এবং রাফে সালমান রিফাত থাকতে পারেন বলে আলোচনা ছিল।
কিন্তু ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক এই দুই নেতা নতুন দলে থাকছেন না জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
দল গঠনের একাধিক নেতা বলেছেন, “ব্যক্তিগত এবং বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একজন আনাগ্রহী” হলেও “সামগ্রিক কার্যক্রম ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে”।
অনেকেই বলছেন, দল ঘোষণার আগেই পদ-পদবি নিয়ে এই ধরনের বিভাজন দলের “ভাবমূর্তি সংকটের” কারণ হতে পারে।
বিষয়টিকে আবার ভিন্নভাবেও দেখছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নেতারা দলে না থাকায় জামায়াতের বি-টিম হয়ে কাজ করার যে অভিযোগ নতুন দলের বিরুদ্ধে উঠেছিল, এর মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে দলটি।
প্রথম দিকে শোনা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মতো চার সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দলটি যাত্রা শুরু করবে।
পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বিভেদের খবর সামনে এলে পদ সংখ্যা বাড়ানোর খবরও আসে গণমাধ্যমে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুই সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ এবং রাফে সালমান রিফাত।
চলমান আলোচনার মধ্যেই দল ঘোষণার একদিন আগে দলে না থাকার বিষয়টি জানিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন মি. জুনায়েদ।
পদ-পদবি নিয়ে সংকট
সপ্তাহখানেক আগেই বিষয়টি দলের নেতাদেরকে জানিয়েছেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি। লেখেন, “বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ও জাতির নজর নতুন দলের ওপর নিবদ্ধ রাখতে নীরবতা বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু চারপাশের গুঞ্জন থামছে না। তাই স্পষ্ট করে রাখছি”।
পরে তার পোস্টটি শেয়ার করে মি. রিফাত লিখেছেন, “২৮ তারিখে ঘোষিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে আমিও থাকছি না।”
পোস্টের শেষে দুইজনই নতুন দলের জন্য শুভ কামনা জানান।
এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওনারা নেতৃত্বের জায়াগায় আসার কথা ছিল, এটা আমরা কখনও অফিসিয়ালি বলি নাই”।
“আমরা তো চাচ্ছি, অভ্যুত্থানের পক্ষে যত শক্তি আছে তারা একত্রিত থাকবে এবং একসাথে কাজ করবে,” বলেন তিনি।
এদিকে পদ বণ্টনের বিষয় নিয়ে এখনও আলাপ-আলোচনা চলছে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “মোটাদাগে কোনো বিভাজন নেই।”
এদিকে, নতুন দলের সদস্যসচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাদের রাজনীতির প্রতি আগ্রহী সবাইকেই আমাদের সঙ্গে রাখার উদ্যোগ নিয়েছি।”
সেক্ষেত্রে একেবারেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত থেকে কেউ না থাকলে তা তাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও করেন মি. হোসেন।