তাবলীগ জামায়াতের চলমান দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিরসনে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়েরকে খোলা চিঠি দিয়েছে। সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে তাবলীগ জামায়াতের আহলে শুরা সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম এই খোলা চিঠি লেখেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দেয়া এই চিঠির প্রথমেই ওয়াসিফ ইসলাম পূর্বে একসঙ্গে তাবলীগের এই মোবারক মেহনত করার স্মৃতিচারণ করেন। একইসঙ্গে ২০১৮ সালে তাবলীগের বিভক্তির পর কাকরাইল মসজিদে দুই পক্ষের অবস্থান নিয়ে চালু হওয়া যে নিয়ম চলে আসছে সে নিয়মের বাইরে না যেতে অনুরোধ জানান।
চিঠিতে তাবলীগ জামায়াতের আহলে শুরা সৈয়দ ওয়াসিফ ইসলাম বলেন-
‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
মাওলানা সাহেব, আশা করি আল্লাহপাকের অশেষ ফজলে আফিয়াতের সাথে দ্বীন ও দাওয়াতের মেহনতে মশগুল আছেন। আল্লাহপাক আপনার হায়াতে বরকত দান করুন। আমিন।
প্রিয় মাওলানা, আমাদের শ্রদ্ধা ও মুহাব্বাতের অনেকটা জায়গাজুড়ে ছিল আপনার অবস্থান। কাকরাইল মার্কাজের নুরানী পরিবেশে একসাথে দাওয়াত ও তাবলীগের মুবারক মেহনতে কতোটা লম্বা সময় ধরেই না মশগুল থেকেছি আমরা! দুঃখজনক হলেও এই বাস্তবতা আমাদেরকে কষ্ট দেয় যে, জীবনের পড়ন্তবেলায় আমরা আলাদা বলয়ে কাজ করে যাচ্ছি!
যাই হোক, একসাথে চলতে চলতে ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যায়। মনে রাখবেন, আমরা ‘এক কালিমার ভাই’। তাই বারবার আমরা আপনাকে ঘরোয়াভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আফসোস! আপনি আমাদের আহ্বানে সাড়া দেননি! আজ দেখতে পাচ্ছি, আমাদেরকে নির্মূল করার লক্ষ্যে যে রাজনৈতিক দুষ্টচক্র ব্যবহার করেছেন আপনি, তারাই এখন আপনার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে! ধীরে ধীরে আপনাদের তাবলীগ রাজনৈতিক রূপ গ্রহণ করছে! এটা শুধু আপনার জন্যই নয়, বরং গোটা তাবলীগ, কাকরাইল মার্কাজ ও টঙ্গী ইজতেমার জন্য একটি অশনি সংকেত!
মুহতারাম মাওলানা, গত ৩ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে আবার আমরা আমিরুল হিন্দ মাওলানা আরশাদ মাদানী ও শাইখুল ইসলাম মুফতি ত্বকী উসমানী (দা. বা.)-দের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সমঝোতামূলক ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমের মধ্যস্থতায় আপনাদেরকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আপনারা আমাদের হতাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইজতেমা বিষয়ক ৪ নভেম্বরের বৈঠককে উপেক্ষা করে তাঁদের চিঠি দিয়েছেন যে, আমরা ‘না হক’ দল! আপনারা এমনকি একসাথে আমাদের সাথে বসতেও তৈরি নন! হায়!!
আপনাদের এমন আচরণে আমরা হতবাক হচ্ছি যে, বিশ্ববরেণ্য উলামায়ে কেরামের সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্য ও সমঝোতার প্রস্তাবনাকে এড়িয়ে কিভাবে আপনারা এমন হঠকারিতা প্রদর্শন করতে পারেন?!
কাবিলে ইহতিরাম ক্বারী মাওলানা জুবায়ের সাহেব! আমরা ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে একজন মুত্তাকি ও খোদাভীরু আলিম হিসেবেই চিন্তা করতাম। কিন্তু আপনি ইদানিংকালে দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে কাকরাইল মসজিদ নিজ দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে কঠিন সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন! মাদ্রাসার ছাত্র, উলামায়েকেরামকে জড়ো করে আরেকটি ‘১ ডিসেম্বর’ তৈরি করতে চাচ্ছেন! আমরা স্পষ্ট করে আপনাকে বলতে চাই, ১৫ তারিখ যদি আপনি কাকরাইল মার্কাজ দখলে রাখার চেষ্টা করেন, আর এতে জান ও মালের কোনো ক্ষয় বা ক্ষতি হয়- দেশের প্রচলিত আইনে তার সম্পূর্ণ দায়ভার আপনাকেই বহন করতে হবে!
আমরা আপনাকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছি: বিশ্ব মার্কাজ ‘নিজামুদ্দীনের অনুসারীদেরকে সংখ্যালঘু বা দুর্বল ভাবা’- এটা হবে আপনার জীবনের অন্যতম বড়ো ভুল!
পরিশেষে বলছি, আসুন; জীবনের পড়ন্তবেলায় ইলিয়াস (রহ.)-এর শেষরাতের চোখের পানি এবং আহাজারির বদৌলতে নবুয়তের যে মহান মেহনত এবং আমানত আমরা পেয়েছি, সেটিকে আর বিতর্কিত না করি! বিশ্ববরেণ্য উলামায়েকেরামের মতামত গ্রহণ করে একসাথে আগের মতো দাওয়াতের মেহনত করি। অথবা আপন আপন জায়গায় যার যার মতো করে দাওয়াতের মেহনত করি এবং একে অপরের দ্বীনের মেহনতে ও ইজতেমায় বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকি।
প্রিয় মাওলানা, আপনি ফিরে আসুন, আপনার জন্য আমাদের দুয়ার উন্মুক্ত। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি- আপনাকে আমরা নিজামুদ্দীনের হজরতগণের মাসোয়ারা অনুযায়ী আগের সেই সম্মান এবং মর্যাদায় অধিষ্ঠিত রাখবো।’
এর আগে গত ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা বলেন, বাংলাদেশে ইজতেমা একবারই হবে। দুবার নয়। টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদে তাবলীগ জামায়াতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভী পন্থীদের আর ঢুকতে দেওয়া হবেনা।