Monday, December 23, 2024

ফোনে মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন রকি

আরও পড়ুন

মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন কামরুল হাবিব রকি। কিন্তু, বাঁচতে পারলেন না। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুনের ঘটনায় তিনি মারা যান।

দরিদ্র পরিবারে শত স্বপ্ন আর হাসিমুখে দুই মাস আগে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে চাকরি নেন রকি। এবার দুই মাস পর তিনি বাড়িতে ফিরলেন দগ্ধ পোড়া লাশ হয়ে।

রকির (২১) বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা গ্রামের কামারপাড়াতে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তার লাশ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে। তার মৃত্যুর সংবাদে স্বজন, প্রতিবেশীরা ভিড় করে এক নজর দেখার জন্য। তাদের আহাজারি আর কান্নায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শুক্রবার দুপুরে নিহত রকির গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ধোপাখোলা কামারপাড়াতে গিয়ে দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনেরা রকির বাড়িতে ভিড় করছেন। বাড়ির উঠোনে খাটিয়ার ওপরে কাফনের কাপড়ে রকির মরদেহ শোয়ানো রয়েছে। তাকে ঘিরেই স্বজনেরা চেয়ারে বসে আছে। একটু দূরেই চেয়ারে দাদি রেহেনা বেগম আহাজারি করছেন। তার একটু দূরেই রকির মা রিপা খাতুন বিলাপ করছেন। নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা তাকে ঘিরে সান্ত্বনা দিতে দেখা যাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  অনিয়ম করে ভোটের খরচ তোলার ঘোষণা দিলেন নাটোর-১ আসনের এমপি

বিলাপ করে রকির মা রিপা খাতুন বলতে লাগলেন, আমার ছেলেটারে মাদ্রাসাতে পড়িয়েছি। নামাজ কালামের মধ্যে থাকত সে। কত আদরের ছেলে ছিল। (ও শোনা পাখি…। তুমি (রকি) না বলেছিলে আমারে ছাড়া থাকতে পারবা না। কেন তুমি আমারে ছেড়ে চলে গেলে)। আমারে খুব ভালোবাসত। আমি অসুস্থ হলে আমার সব কাজে সহযোগিতা করত।

আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমারে কল দিয়েছে। দিয়ে বলছে, মা আমার কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে। আমারে বাঁচাও। আমিও তারে (রকি) সান্ত্বনা দিছি তোমার কিছু হবে না সোনা। দোয়া পড়ো সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও সে বলতে লাগল, আম্মু আমি আর বাঁচব না। তারপর ফোন কেটে গেল আর কিছু শুনতে পারলাম না। আর কোনো কথাও হলো না। আমার সোনা আমার জন্য না রেখে কিছু খেত না। এখন কী হবে সোনা। ও আল্লাহ তুমি আমার সোনারে ফিরিয়ে দাও…। আমার সোনার বদলে আমারে নিয়ে নাও…।

আরও পড়ুনঃ  যে জেলায় বিয়ের পর নিজের পরিবার ছেড়ে স্বামী চলে যান স্ত্রীর বাড়িতে

নিহত রকির ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, তার ভাই আলিম পাস করে গত ডিসেম্বর মাসে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেন। বৃহস্পতিবার সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুন লাগে। তিনি ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ বাড়িতে এসেছে।

রকির আরেক ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। বাবা ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালায়। তাদের দুজনের আয়ে আমাদের সংসার চলত। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি।

নিহত রকির মামা জিহাদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রকির ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়েছি, সে রিসিভ করেনি। পরে আমাকে কল ব্যাক করে বাঁচানোর আকুতি জানায়। আমাকে বলে মামা আমাদের ব্রাঞ্চে (কাচ্চি ভাই বেইলি রোড শাখা) আগুন লাগছে। আমি আটকা পড়েছি। আমাকে বাঁচাও। কিছুক্ষণ পর কল কেটে যায়। আমি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা জানায়, উদ্ধারকাজ চলছে, ধৈর্য ধরুন। এরপর আমি ঢাকায় রওনা হই। সেখানে হাসপাতালে পাই রকিকে। ততক্ষণে তার মৃত্যু ঘোষণা করেছে ডাক্তার।

আরও পড়ুনঃ  স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে স্ত্রীর আত্মহত্যা

এদিকে, নিহত রকির বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনদের আহাজারিতে চারপাশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরাও রকির স্মৃতিচারণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। সবাই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়েছেন। রকির মা রিপা বেগম ও বাবা কবির হোসেন সন্তানের শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শুধু সন্তানের জন্য মাতম করছেন তারা। বাদ জুমা স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ