Tuesday, December 24, 2024

দাবি এবার ‘একদফা’

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগের ‘একদফায়’ গড়াল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম একদফার ঘোষণাপত্র তুলে ধরেন। দাবি আদায়ে আজ রোববার থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা।

ছাত্র-জনতার সমাবেশে উত্থাপিত ঘোষণাপত্রে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জনগণকে মুক্ত করতে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একদফা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। একদফাটি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার কোনোভাবেই আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার অধিকার রাখে না।’

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘ শুধু শেখ হাসিনা নন, মন্ত্রিপরিষদ, সরকার—সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে। যে খুন-লুটপাট, দুর্নীতি এই দেশে হয়েছে, তার বিচার হতে হবে এবং এই যে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা এটাকে বিলোপ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিকে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বাধা দেওয়া শুরু করলে একপর্যায়ে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। গত ১৬ জুলাই সংঘাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়। এরপর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। পরের কয়েকদিনে হামলা, গুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সারা দেশে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। আহত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিটিভি ভবন, মেট্রোরেল স্টেশন, এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, সেতু ভবন, বিআরটিএ কার্যালয়সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। সেইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কার করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে হাজির স্ত্রী, এলাকায় তোলপাড়

অন্যদিকে মূল দাবি পূরণ হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে ৯ দফা দাবি পেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, কয়েকজন মন্ত্রীর পদত্যাগ, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, মেধার ভিত্তিতে সিট বণ্টন ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ। এর মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ এবং আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার চলতে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে নিরাপত্তা হেফাজতের নামে ডিবি অফিসে রাখা হয়। এসব কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে।

এই অবস্থায় শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সার্বিক বিষয় সুরাহার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এজন্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও মাহবুবউল-আলম হানিফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া দেননি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।

আরও পড়ুনঃ  সকালে ধরা, দুপুরেই থানার গ্রিল ভেঙে পালাল আসামি

সরকারের আলোচনার আহ্বান উপেক্ষা করে গতকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কর্মসূচিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সেখানে সামনের সারিতে ছিলেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদেরসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা। তাদের মধ্যে তিনজন বক্তব্য দেন। একদফার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

অসহযোগে যা থাকছে: সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে জরুরি সেবা ছাড়া সব ক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

রূপরেখায় বলা হয়েছে, ‘কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না। সব ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কলকারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না। সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন। বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না। দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টসকর্মী ভাইবোনরা কাজে যাবেন না। গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না। জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যাতিত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে। দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে। বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে। আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না। বিলাস দ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণিবিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।’

আরও পড়ুনঃ  পরীমণির সঙ্গে রাত-যাপন : বাধ্যতামূলক অবসরে সেই পুলিশ কর্মকর্তা

হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ