হারিকেন বেরিল গ্রেনাডার ক্যারিবিয়ান দ্বীপ ক্যারিয়াকোতে আঘাত হেনেছে। সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় ঝড়টি দ্বীপ অতিক্রম শুরু করে। এতে শক্তি না কমে আরও ভয়ংকর রূপ নেয় বেরিল। বর্তমানে এটি ভয়ানক শক্তি সঞ্চয় করে ক্যাটাগরি-৪ হারিকেনে পরিণত হয়ে এগিয়ে আসছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আটলান্টিক মৌসুমের প্রথম ঝড় হারিকেন অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। খবর সিবিএস নিউজের।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, গতকাল রাত ৮টা নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জজুড়ে বেরিলের প্রভাব শুরু হয়। এটি ব্যাপক শক্তি নিয়ে দ্রুত সামনের দিকে সরে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে গ্রেনাডা ও বার্বাডোসে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনের এনবিসি রেডিও বেকিয়া দ্বীপে একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। যদিও সিবিএস নিউজ স্বাধীনভাবে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে দেশটিতে বেরিলের ভয়াবহ তাণ্ডব নিশ্চিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল, বাড়িঘর, ভবন ও কৃষিজমি। ঝড়টি এতই শক্তিশালী ছিল যে, অনেক পাকা ঘরের ছাদ ও গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। উপড়ে ফেলেছে বিদ্যুতের খুঁটি।
ঝড়টির অগ্রসরের গতি-প্রকৃতি দেখে আবহাওয়াবিদরা জ্যামাইকাকেও সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলেছে। দেশটি জানিয়েছে, তারা সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। উপকূলজুড়ে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তেমনি ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও হাইতির দক্ষিণ উপকূলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের সতর্কতা কার্যকর রয়েছে। এদিকে বার্বাডোস, টোবাগো, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, মার্টিনিকের ঝড়ের সতর্কতা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হারিকেন কেন্দ্রের মতে, হারিকেন পরিস্থিতি আসন্ন হলে জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার প্রস্তুতি দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের সতর্কতা মানে হলো, ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সতর্কীকরণ এলাকায় ঝড়টি আঘাত হানতে পারে। যেহেতু গ্রেনাডা ও বার্বাডোসের উপকূলে ঝড়টি আছড়ে পড়েছে তাই সেখানে আর পূর্বপ্রস্তুতির সুযোগ নেই।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বেরিল ডোমিনিকান রিপাবলিকের প্রায় ৫৭৫ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে এবং জ্যামাইকার প্রায় ৯১০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে কেন্দ্রীভূত ছিল। যা পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম থেকে ২১ মাইল বেগে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে ১৫৫ মাইল ঘণ্টা বেগে বাতাস বইছে। দিনের শুরুতে বাতাসের বেগ ছিল ১৫০ মাইল।
হারিকেনের বাতাস ঝড়ের কেন্দ্র থেকে ৪০ মাইল পর্যন্ত বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। এতে সরাসরি আঘাত না হানলেও পাশের দেশগুলোতে ঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বর্তমানে বার্বাডোস অতিক্রমের পর বেরিল জ্যামাইকার দিকে এগোচ্ছে। এরপর মেক্সিকো অভিমুখে অগ্রসর হতে পারে। গত সপ্তাহের পূর্বভাসে বলা হয়েছিল, মেক্সিকোতে পৌঁছানোর সময় ঝড়টি দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, মেক্সিকো উপকূলেও আঘাত হানার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া অঞ্চলে ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হারিকেনের মৌসুম। চলতি বছর ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি হারিকেন আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এর আগে আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালে অন্তত ২৫টি ঝড় আঘাত হানতে পারে।
এসব ঝড়ের মধ্যে ৮ থেকে ১৩টি হারিকেনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড উষ্ণ হয়ে ওঠার কারণে ওই অঞ্চলে ঘনঘন হারিকেনের সৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।