Monday, December 23, 2024

উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহী, শাহরিয়ারের কুশপুত্তলিকা দাহ ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা

আরও পড়ুন

বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যার ঘটনায় উত্তরের শান্ত নগরী রাজশাহী উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বাবুলের জানাজার মাঠে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের কটাক্ষের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয় এবং রাজশাহীতে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তবে শাহরিয়ার আলম পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, ‘শনিবারই রাজশাহীতে যাব, দেখব কীভাবে ঠেকায়।’

শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজশাহী মহানগরে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় রাজশাহী মহানগর যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মণির সভাপতিত্বে ও মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুম মুনির সবুজের সঞ্চালনায় নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়।

অন্যদিকে, অবাঞ্ছিত ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গত ১৫ বছর প্রতিমন্ত্রী থাকলেও আমাকে রাজশাহীতে কোনো কাজ করতে দেয়া হয়নি। মেয়র পদের অপব্যবহার করে তিনি সব কাজে বাধা দিতেন। আমি কালকেই (শনিবার) রাজশাহীতে যাব, দেখি তিনি কী করেন? আমরা তাকে সম্মান দিয়েছি। কিন্তু তিনি রাখতে পারেননি।

আরও পড়ুনঃ  আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার নামে ভিক্ষুকের টাকা আত্মসাৎ করেন আজাদ

এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল কুমারপাড়ায় থাকা রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশের।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় নৃশংস হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ২৬ জুন তার মৃত্যু হয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ তাদের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। অথচ এই ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় ঘোরাতে বাবুল হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম জড়িয়েছেন। এটি করে তিনি চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই এমপি শাহরিয়ার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা খায়রুজ্জামান লিটনকে জড়িয়ে জানাজার মাঠে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তারা সমাবেশ থেকে এমপি শাহরিয়ারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুনঃ  মায়ের পায়ের ধাক্কায় ভেসে ওঠে ফারুকের মরদেহ

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজশাহীর বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিহত আওয়ামী লীগ বাবুলের জানাজায় গিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের বর্তমান সদস্য শাহরিয়ার আলম এ সময় সরাসরি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ তোলেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে ‘আমরা জবাব চাই,। অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাবলুর কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক?’

এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, খায়রুজ্জামান লিটন ও বাঘা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাবলুর নামে মামলা করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শাহরিয়ার আলম। এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেন।

শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে নিজ দপ্তরে প্রেস ব্রিফিং করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, জানাজায় আমাকে দায়ী করে, সরাসরি আমার নাম ধরে, আমার দলীয় পদ উল্লেখ করে বাঘা-চারঘাটের বর্তমান এমপি কীভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঈর্ষাপরায়ণভাবে এমন উক্তি করতে পারেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়।

আরও পড়ুনঃ  ট্রাম্প ৯৫ কামাল হ্যারিস ৩৫

প্রসঙ্গত, ২২ জুন সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অর্ধশত নেতাকর্মী-সমর্থক আহত হন। এরই মধ্যে সংঘর্ষে আহত আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুন মারা যান। ২৭ জুন বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার পর গাওপাড়া গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে বাবা আমিরুল ইসলাম আমুর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

অন্যদিকে, রাজশাহীর বাঘায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজসহ ৭ আসামির একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুরে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে এ মামলার প্রধান আসামি পৌর মেয়র আক্কাছ আলীসহ অন্যরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ