নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল কিংবা সংস্কারের দাবিতে আবারও রাস্তায় নেমেছেন অভিভাবকরা। তারা জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য দেশের শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা এখনো প্রস্তুত নয়। এ শিক্ষাক্রমে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ বেড়ে গেছে। সরকার খরচ কমানোর আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, প্রেজেন্টেশনসহ বিভিন্ন কাজে শিশুরা রাতভর জেগে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
সোমবার (১০ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকরা। কর্মসূচিতে অভিভাবকরা নতুন শিক্ষাক্রম কেন উপযুক্ত নয় এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর এটি কেমন প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। পাশাপাশি এ নিয়ে আন্দোলনরত অভিভাবকদের হয়রানি না করে তাদের মতামত শোনার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে ভিকারুননিসা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর মা তাহেরা আক্তার রুপা বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রস্তুত নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট করা অভিভাবক। আমিও অনেক কিছু বুঝতে পারছি না। নতুন শিক্ষাক্রম আসার পর আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট বা প্রজেক্ট হিসেবে ছবিসহ অনেক কিছু প্রিন্ট করে দিতে হচ্ছে। বাচ্চারা পড়া তৈরি করতে গিয়ে ঘুমানোর সময় পাচ্ছে না। এ কেমন শিক্ষাব্যবস্থা?’
তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক হলে আমরা তাকে সমস্যাগুলো বুঝিয়ে বলতে পারতাম। মূলত, প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে অনেক কিছুই হচ্ছে। তিনি হয়তো অনেক কিছুই জানেন না। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান, আপনি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলুন এবং সমস্যাগুলোর বিষয়ে নজর দেন।’
খালেদা আক্তার নামে আরেক অভিভাবক বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে অভিভাবকরা সচেতন। সচেতনভাবেই সবাই চাচ্ছে এ শিক্ষাক্রম বাতিল করে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, এমন শিক্ষাক্রম বহাল থাকুক। অথবা নতুন করে চালু করা হোক। শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের মতামত নিতে বসলে সবাই এমনটাই বলবে।’
মারজান আক্তার নামে আরেকজন বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে শিক্ষার্থীরা মৌলিক শিক্ষা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। রাতে কম ঘুমিয়ে সকাল ৭টায় ক্লাসে যাচ্ছে। মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) রিসাইকেল পেপারের নির্দেশনার সঙ্গে বাস্তবতা মিলছে না। শিক্ষার্থীদের প্রচুর শিক্ষা উপকরণ কিনে দিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল চাচ্ছি না। আমরা বলছি, নতুন শিক্ষাক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উপযুক্ত করতে হবে। যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী করতে হবে। বিশেষ করে মূল্যায়ন বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। শিক্ষকের মতো অভিভাবকদেরও শিক্ষাক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক হামিদা পারভিন, আল-আসমা-উল হোসনা, আহসানে তাকবিম ও রীতা আজাদ শান্তি।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নবকুমার স্কুলের অভিভাবক মুসলিম বিন হাই, মীরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক জাকারিয়া রাজিব এবং বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।