Tuesday, December 24, 2024

ছেলেকে হত্যার পর প্রকৌশলীর আত্মহত্যা, নেপথ্যে যা জানা গেল

আরও পড়ুন

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের একটি বাসা থেকে এক প্রকৌশলী ও তার ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে আহত অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মরদেহের পাশ থেকে ‘ঘটনার জন্য কেউ দায়ী নয়’ এমন একটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রোববার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। প্রকৌশলীর স্ত্রী ও স্বজনরা জানান, জমি কিনে প্রতারিত ও শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

জানা গেছে, এদিন সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মশিউর রহমান ও তার ছেলে মোদাব্বির হোসেনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মরদেহ মর্গে রাখা রয়েছে, সোমবার (৮ এপ্রিল) ময়নাতদন্ত করা হতে পারে। একই সময় আহত অবস্থায় প্রকৌশলীর মেয়ে সিনথিয়াকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি শ্যামলীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থাও সংকটাপন্ন। ঘটনার সময় তার স্ত্রী মজিদা খাতুন ডলি বাসায় ছিলেন না। তিনি শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। পরিবার নিয়ে আগারগাঁও তালতলার মোল্লাপাড়ার একটি বাসার দোতলায় ভাড়া থাকতেন। মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাদাবের। সিনথিয়া শেরেবাংলা নগরের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

আরও পড়ুনঃ  ছাত্রলীগ নেতার পেট ও বুকে কলম ঢুকিয়ে দিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা

ছেলেকে হত্যার পর বাবা আত্মহত্যা করেছেন। চিরকুটটি মশিউরের লেখা হতে পারে। এর পরও সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্বজনরা বলছেন, মশিউর একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে চাকরি ছেড়ে শেয়ার বাজারে ব্যবসায় লাগেন। এতে আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি। অন্যদিকে, কয়েক বছর আগে দক্ষিণখান এলাকায় রতন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকায় চার শতকের মতো জমি কেনেন তিনি। তবে পরবর্তীতে জানতে পারেন, জমির দলিল ভুয়া। রতন ১০ লাখ টাকা ফেরত দিতে রাজি হন। কিন্তু সেই টাকা দিচ্ছি-দেব করে ঘুরাতে থাকেন। কিছুদিন ধরে রতন মশিউরের ফোনও রিসিভ করছিলেন না। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। হতাশা থেকেই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  বয়কটে তরমুজ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, দাম নেমেছে অর্ধেকে

মশিউরের স্ত্রী মজিদা খাতুন ডলি জানান, ‘পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়া ও ব্যবসায় মন্দা যাওয়ায় আর্থিক অনটনে ছিলাম আমরা। আমার টিউশনির টাকা দিয়ে দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে সংসারের ব্যয় বহন করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এ কারণে আমার স্বামী হতাশায় ছিলেন। অভাব-অনটনের কারণে হতাশা থেকেই হয়তো ছেলেকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন।’

তিনি জানান, ‘তার স্বামী আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে শেয়ারবাজারের সেকেন্ডারি লেভেলে ব্যবসা করতেন। তবে সেখান থেকে খুব একটা আয় হতো না। গত এক সপ্তাহ থেকে ওই ব্যবসার অবস্থা আরও খারাপ হয়। এছাড়া তার স্বামী পাঁচ–ছয় বছর আগে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনে প্রতারিত হন। সেই টাকা তিন–চার বছর ধরে দিচ্ছি দেব বলে ঘোরানো হচ্ছে তাদের। সংসারের খরচ জোগান দিতে তিনি চারটি টিউশনি করেন।’

আরও পড়ুনঃ  ইফতারে খেজুরও জুটছে না মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের

ডলি বলেন, ‘টিউশনি থেকে মাসে আয় হয় আট হাজার টাকা। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে বাসা থেকে টিউশনি করার জন্য বের হই। এ সময় দুই সন্তান ও স্বামী বাসায় ছিলেন। টিউশনি শেষ করে পৌনে ৪টার দিকে বাসায় এসে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। পরে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বাসার নিরাপত্তাকর্মীর সহায়তায় ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে দরজা ভেঙে দেখি ঘরের এক রুমে মেয়েটা অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। আরেক রুমে খাটের ওপরে ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ওই রুমের সিলিং ফেনের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে মশিউর। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক বাবা ও ছেলেকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। আর মেয়ের অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে শ্যামলী ডক্টরস কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগানস্টিক সেন্টারের নিবির পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ