ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ’র জিম্মি নাবিকদের রুটিন মেইনটেনেন্সের কাজ করার অনুমতি দিয়েছে জলদস্যুরা। শনিবার থেকেই নাবিকরা জাহাজের ডেক এবং ইঞ্জিন রুমের রুটিন কাজ শুরু করেন।
এতে জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে যে বিস্ফোরণের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা অনেকটাই লাঘব হলো। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়লা দাহ্য জাতীয় খনিজ পদার্থ, এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা গেলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি আছে।
জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে যোযোগ রাখা এক সিনিয়র নাবিক নাম না প্রকাশের শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘স্বস্তির বিষয় হলো বাংলাদেশি নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুদের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় স্থান পরিবর্তনের পর আমাদের নাবিকদের জাহাজের রুটিন চেকাপের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের নাবিকরা ডেক এবং ইঞ্জিন রুমের সব কিছু দেখভাল করছেন।’
এর আগে জাহাজের মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের একটা প্রবলেম হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কোল কার্গো আছে। অ্যাবাউট ফিফটি ফাইভ থাউজ্যান্ডস। এটি একটু ডেইঞ্জারাস কার্গো, এটা হেজার্ড আছে। এটার মিথেন কনসেনট্রেশন বাড়ে। সর্বশেষ অক্সিজেন লেভেল ৯-১০ পার্সেন্ট ছিল। এটা রেগুলার আপডেট নিতে হয়। ইনক্রিজ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরে বাল্ক জাহাজে কয়লা পরিবহনে ৫ ধরনের বিপদের শঙ্কায় কিছু নিরাপত্তা পদক্ষেপ মেনে চলতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় জাহাজের খোলের ভেতরে মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড এবং অক্সিজেনের পরিমাপ নিতে হয়। বের করে দিতে হয় নির্ধারিত মাত্রার বেশি গ্যাস।
তারা বলছেন, বদ্ধ জায়গায় কয়লা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়া মিথেনের পরিমাণ বাড়লে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ছাড়া কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে নাবিকদের জীবনের ঝুঁকিও থাকে।
এ বিষয়ে মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, মিথেন খুবই দাহ্য একটি গ্যাস। যেকোনো সময় এতে আগুন ধরতে পারে। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে ডেকে সিগারেটও খেতে দেই না। কারণ, সামান্য সিগারেটের আগুন থেকে সেখানে বড় বিস্ফোরণ হতে পারে।
প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কয়লার কনসেন্ট্রেশন মেপে দেখতে হয়। এটি বিস্ফোরণের মাত্রার ওপরে উঠে গেলে ফোর্স মেইনটেইন করতে হয়। ফোর্স মেইনটেইন করে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস বের করে দিতে হয়। এটা ২৪ ঘণ্টার একটা প্রক্রিয়া।