Monday, December 23, 2024

‘ঈদ কার্ড’ চেনে না নতুন প্রজন্ম

আরও পড়ুন

রমজান ঘিরে পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ী দোকান বসতো। সেখানে শুভেচ্ছা বার্তায় ভরা ঈদ কার্ডের পসরা সাজিয়ে রাখা হতো। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখান থেকে ঈদ কার্ড নিয়ে প্রিয়জনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেন। কেউ কেউ আবার ঈদ কার্ড হিসেবে রঙিন কাগজকে নান্দনিকভাবে সাজাতেন হাতের লেখায়। রমজানের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন একেবারেই নেই। নতুন প্রজন্মের কাছে ঈদ কার্ড যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য।

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেও ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর একটা বড় মাধ্যম ছিল ঈদ কার্ড। মানুষ উৎসব অনুষ্ঠানের দিনগুলোতে বর্ণিল সব কার্ডের দিকে ঝুঁকতেন। আবেগ আর ভালোবাসার বার্তায় ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হতো প্রিয়জনদের। কিন্তু রাত জেগে বন্ধুর জন্য হাতে বানানো সেই রঙিন কার্ড এখন ইতিহাস। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির দাপটে হারাতে বসেছে সেই ঐতিহ্য।

আগে রমজান ঘিরে ছাপাখানায় শুরু হতো ঈদ কার্ড বানানোর কর্মযজ্ঞ। এখন সেখানেও পড়েছে ভাটার টান।

সময়ের ব্যবধানে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে এসেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার), ই-মেইল, ফেসবুক আর এমএমএসের ভিড়ে হারাতে বসেছে ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সংস্কৃতি। মোবাইলের টুং শব্দটাই এখন মুহূর্তের মধ্যে মোবাইলের স্ক্রিনে ভাসিয়ে তোলে শুভেচ্ছা বার্তা।

আরও পড়ুনঃ  আজকের ছবিটি তুলে রাখুন, ইতিহাসের সাক্ষী : ড. ইউনূস

একসময় সারা দেশের বিভিন্ন শহর, মফস্বল, পাড়া মহল্লা, এমনকি গ্রামের অলিতে গলিতে ছোট ছোট ঈদ কার্ডের দোকান দেখা যেত। পাওয়া যেত ঈদ কার্ড। বর্ণিল ডিজাইন আর বাহারি রঙের ঈদ কার্ডে আঁকা থাকতো গম্বুজ, মিনারের উপর চাঁদ-তারা, লাল গোলাপ বা কোলাকুলির চিত্র। তার ওপর মোটা অক্ষরে লেখা ‘ঈদ মোবারক’ দ্বিগুণ করে দিত ঈদের আনন্দ। এ কার্ডগুলোতে শুভেচ্ছা বার্তার পাশাপাশি ফুল, পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, মসজিদ, মক্কা শরীফের ছবিসহ বিখ্যাত তারকাদের ছবিও থাকতো। এছাড়া ছোটদের জন্য নানা মজার মিনি কার্ড ছাপানো হতো। জনপ্রিয় সব কার্টুন চরিত্র থাকত মিনি কার্ডগুলোতে। কিন্তু এখন আবেদন হারিয়েছে ঈদ কার্ডের।

পরিবারের ছোটরা কার্ড বানাতে ব্যস্ত থাকতো ঈদের আগের দিনগুলোতে। স্কুলের বন্ধুকে বা পরিবারের প্রিয়জনকে ঈদ কার্ড দেওয়া ছিল অনেক বেশি আনন্দের। হাতে কাগজ কেটে রঙিন কলমে সাজানো হতো দারুণ দারুণ সব ঈদ কার্ড। ঈদ আসলেই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ও তরুণ-তরুণীদের ব্যস্ততা ছিল ঈদ কার্ড সংগ্রহের দিকে। সৃজনশীল সেই সৃষ্টিকর্ম সবার মধ্যে যেন একটা আন্তরিক সম্পর্কের জন্ম দিত।

আরও পড়ুনঃ  ড. ইউনূসকে দেশের জন্য কোনো কাজে পাওয়া যায় না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের হার বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঈদ কার্ডের আবেদন। এ স্থানে যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোনে এসএমএস, এমএমএস। এখন কেউ কষ্ট করে মোবাইলেও এসএমএস লেখে না, ভাচুর্য়াল ঈদ কার্ড বা ই-কার্ডের মাধ্যমে ফেসবুক বা ই-মেইলে বন্ধু-বান্ধব, আপনজনকে শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দায় সারছে মানুষ।

ঈদ কার্ডের প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা এস এম গিয়াস উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের শৈশবজুড়ে ঈদ কার্ড নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমরা রঙিন কাগজকে কেটে নানা আকৃতি করে বড় করে আর্ট করতাম ”ঈদ মোবারক”। কারটা কত সুন্দর হয়েছে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতো। বন্ধুবান্ধবদের দিতাম ঈদ কার্ড। বর্তমানে তো এসবের কিছুই নেই। সবকিছু ইন্টারনেট মোবাইলে ডুবে গেছে।’

চট্টগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা খাইরুল আবরার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেককিছু হারিয়ে ফেলেছি, যা আগে আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। যেমন আপনি এখন চাইলেও হারিকেন, রেডিও পাবেন না। কিন্তু একসময় এগুলো ছাড়া জীবন কল্পনাও করা যেত না। একইভাবে ঈদ কার্ডও আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।’

আরও পড়ুনঃ  দুবাই থেকে উটের দুধ এনে ঢাকায় তৈরি হচ্ছে চা, দাম কত জানেন

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাজওয়ার আহমেদ শিপু কখনো দেখেননি ঈদ কার্ড। তাজওয়ার বলেন, ‘বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য ইনভাইটেশন কার্ড দেয় সেটা জানি। কিন্তু ঈদ কার্ড কখনও দেখিনি।’

নকিবুল ইসলাম নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঈদ কার্ডের কথা বাবা মায়ের মুখে শুনেছি।’

ছাপাখানার জন্য প্রসিদ্ধ আন্দরকিল্লার অ্যান্ড মিডিয়া অ্যান্ড প্রিন্টার্সের ম্যানেজার কাজল বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘একসময় ঈদ কার্ড প্রচলন ছিল, আমাদের কাছে ঈদ কার্ড বানানোর অর্ডার আসতো। এখন ঈদ কার্ডের কোনো চাহিদা নাই। সর্বশেষ কখন ঈদ কার্ড করেছি মনেও পড়ছে না। ডিজিটাল যুগে সবাই এখন হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে; ঈদ কার্ডের কদর নাই।’

আন্দরকিল্লার রহিম প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘ঈদ কার্ডের চাহিদা নেই, বাজারও নেই। ১৫-২০ বছর আগে ভালো বাজার ছিল। আগেও রমজানে ভালো বিক্রি হতো।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ